back
এনক্রিপ্টেড ম্যাসেঞ্জার অ্যাপগুলো কি আদৌ নিরাপদ?
ব্লগ
জুন 22, 2023

এই প্রযুক্তির যুগে প্রায় প্রত্যেকে WhatsApp, Telegram, Facebook সহ আরো অনেক অ্যাপ ব্যবহার করে। আমরা পরিবার, বন্ধু-বান্ধব ও সহকর্মীদের সাথে যোগাযোগ করতে এসব অ্যাপ ব্যবহার করি। আমরা এই সোশ্যাল অ্যাপগুলোতে সব ধরনের ডেটা শেয়ার করি আর মনে করি সেখানে আমাদের ডেটা নিরাপদ ও গোপনীয় থাকবে। এই অ্যাপগুলো প্রায়ই এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন সরবরাহ করে বলে দাবি করে। যা থেকে আমরা ধরে নিই কেবল প্রেরক ও প্রাপকই অনলাইনে শেয়ার করা ডেটায় অ্যাক্সেস পাবে। এমনকি অ্যাপের ডেভেলপাররাও সেগুলোতে অ্যাক্সেস পাবে না। তবে, কিছু সাম্প্রতিক ঘটনার কারণে ধারণা করা হচ্ছে যে এসব দাবি পুরোপুরি সত্য নাও হতে পারে।

 

ম্যাসেঞ্জার অ্যাপগুলো কি নিরাপদ নয়?

সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত ম্যাসেঞ্জার অ্যাপ, WhatsApp এর মালিক Facebook। 2016 সালে, কোম্পানিটি এর প্লাটফর্মে এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন নিয়ে আসে। এই নতুন ফিচার ব্যবহারকারীদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা দিতে পারবে বলে দাবি করে। কিন্তু, 2019 সালে উন্মোচিত হয় যে এই অ্যাপে পাঠানো প্রতিটি মেসেজ সার্ভারের কারণে কপি করা হয়। এভাবে, হ্যাকাররা আপনার ফোনে সহজেই স্পাইওয়্যার ইনস্টল করে, সেটিকে ব্যক্তিগত মেসেজ ও মিডিয়া ফাইল সহ ডিভাইসের সকল ডেটায় অ্যাক্সেস দিতে পারে।

Facebook Messenger-ও এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন অফার করে বলে দাবি করে। কিন্তু এটিও সত্য নয়। “সিক্রেট কনভার্সেশন” ফিচারটি ডিফল্টভাবে সক্ষম নয়।  এছাড়াও, অনেকেই তাদের ডেটা অপব্যবহারের জন্য Facebook কে অভিযুক্ত করেছে। Cambridge Analytica স্ক্যান্ডাল এমন একটি উদাহরণ যেখানে কয়েক লক্ষ Facebook ব্যবহারকারীর ডেটা তাদের সম্মতি ছাড়াই সংগ্রহ করা হয়েছিল।

এবং সর্বশেষ, 2022 সালে NSA Tucker Carlson এর ফোন হ্যাক করে এবং তার Signal কনভার্সেশনের উপর গোপনে নজরদারি করে।

Signal আপনার মেসেজ এনক্রিপ্ট করে কিন্তু এর একটি কপি নেয়। তারা যা ‘এনক্রিপ্ট’ করে, তা ‘আনএনক্রিপ্ট’ ও করতে পারে। আপনার মেসেজের ব্যাপারে কোনো টেক কোম্পানিকে কেন বিশ্বাস করবেন? কেন সেটি Zyng এর সাহায্যে, ওয়েব ও কোনো ধরনের সার্ভারের ব্যবহার ছাড়াই আপনি নিজে পাঠাচ্ছেন না?

 

কোন অ্যাপগুলোকে বিশ্বাস করা উচিত?

সবগুলোই নিজেদের প্রাইভেট ও এনক্রিপ্টেড বলে দাবি করলেও, কোন কোন মেসেজিং অ্যাপ আসলেই গোপনীয়তা অফার করে?

প্রথমে “প্রাইভেট” অ্যাপগুলো কোনো সার্ভার ব্যবহার করে কিনা তা খুঁজে বের করুন। যদি হ্যাঁ হয়, তাহলে আপনাকে অবশ্যই বুঝে নিতে হবে যে আপনার কথোপকথন লোকালভাবে বা সুইজারল্যান্ডে একটি সার্ভারে সংরক্ষণ করা হচ্ছে। যে কেউ সেই কোম্পানির কাছে গিয়ে আপনার মেসেজ ডিক্রিপ্ট করার চাবি চাইতে পারে। এমনকি যখন আপনি দেখছেন যে চ্যাটটি এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপ্টেড এবং এটি “XYZ” মিনিটের মধ্যে মুছে দেওয়া হবে, ঠিক তখনো আপনার সকল ডেটা আপনি ও আপনার প্রাপকের জন্য মুছে দেওয়ার আগে কোনো সার্ভারে সংরক্ষণ করা হচ্ছে।

 

যে অ্যাপ কোনো কেন্দ্রিয় সার্ভার ব্যবহার করে না এবং কখনোই আপনার মেসেজ পায় না বা সংরক্ষণ করে না সেটি হলো Zyng।

Zyng 2023 সালের মে মাসে এর বেটা সংস্করণ চালু করার পরিকল্পনা করছে এবং বর্তমানে এর ওয়েবসাইটে আর্লি বেটা সাইনআপ গ্রহণ করছে।  Shazzle Zyng এর মালিক, এবং ShazzleChat একটি সার্ভারহীন প্রাইভেসি অ্যাপের প্রারম্ভিক অধিগ্রহণকারী, কোম্পানিটি কয়েক বছর আগে এই অ্যাপ চালু করে। ShazzleChat অ্যাপ এমন ব্যবহারকারীদের কাছে জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করে যারা নিজেদের গোপনীয়তাকে গুরুত্ব দেন এবং সুযোগ-সুবিধার স্বার্থে নিজেদের নিরাপত্তা কেনাবেচা করা থেকে বিরত থাকতে চান।

Zyng হলো ShazzleChat এর আরো ভালো ও উন্নত সংস্করণ, যেখানে আগের সবগুলো ভুল শনাক্ত করে সংশোধন করা হয়েছে এবং এই নতুন অ্যাপ বুলেটপ্রুফ পিয়ার-টু-পিয়ার এনক্রিপশন এবং ঝকঝকে ও অসাধারণ UI ডিজাইন নিয়ে বাজারে ফিরছে। Zyng এ, ব্যবহারকারীদের কখনোই নিরাপত্তা নিয়ে ভাবতে হয় না। তাদের যোগাযোগ ডিফল্টভাবে গোপন রাখা হয়। এর মানে হলো কেবল আপনি এবং আপনি যার সাথে যোগাযোগ করছেন সেই আপনার মেসেজ পড়তে পারবে – অ্যাপের ডেভেলপাররাও আপনার কথোপকথনে অ্যাক্সেস করতে পারবে না।

এক কথায়, WhatsApp, Telegram, Facebook, ও Signal এর মতো বহুল জনপ্রিয় অ্যাপগুলো দাবি করে যে এসব অ্যাপে আপনার শেয়ার করা ডেটা গোপন ও নিরাপদ থাকবে। কিন্তু সাম্প্রতিক ঘটনা প্রমাণ করেছে যে তাদের এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশনের দাবি পুরোপুরি সত্য নাও হতে পারে। তাই, যেসকল ব্যবহারকারী তাদের গোপনীয়তাকে অগ্রাধিকার দেন তারা Zyng এর মতো অ্যাপ ব্যবহারের চিন্তা করবেন, যা আপনাকে উভয়ের মাঝখানে কোনো কিছুর উপস্থিতি ছাড়াই সরাসরি মেসেজ পাঠানোর সুযোগ দেয়।